ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ (Brahmanbaria Govt. Women’s College Review); সংক্ষেপে BGMC হল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একমাত্র সরকারি মহিলা কলেজ। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এই কলেজটি। ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কলেজটি অনেক চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে অর্ধ শতাব্দীর-ও বেশি বছর পার করেছে। সুদীর্ঘ এ সময়ে কলেজটি বিভিন্ন পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের মধ্য দিয়ে অনেক পরিচিতি লাভ করেছে। জেলার একমাত্র মহিলা কলেজটি জন্মলগ্ন থেকেই নানা ইতিহাস জড়িত।
বিষয়সূচি
বিষয়সূচি
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অবস্থান ও পরিচিতি
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে কেন পড়ব?
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগসমূহ
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের ল্যাব সুবিধা ও গবেষণা কেন্দ্র
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের আবাসিক হল
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অন্যান্য সুবিধা
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের ক্যাম্পাস লাইফ
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য
- ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের ভর্তি পদ্ধতি ও প্রস্তুতি
- শেষকথা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অবস্থান ও পরিচিতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরে জেলা সদর হাসপাতাল রোডে ২ একর ৮০ শতাংশ জায়গা জুড়ে অবস্থিত এই সুনামধন্য কলেজটি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের অন্যতম পরিচিত ও প্রাণকেন্দ্র এই জায়গাটি। ১৯৬৩ সালের ৩১ শে অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার প্রশাসক হয়ে আসেন জনাব এম এম নূর-উন-নবী চৌধুরী। মেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি স্বতন্ত্র কলেজ করার পরিকল্পনা করেন তিনি।তখন অন্যান্য সমাজসেবীদের সহযোগিতা ও পরামর্শ মোতাবেক পুরোদমে শুরু হয় মহাবিদ্যালয় নির্মানের কাজ। তৎকালীন মহকুমা হাসপাতালের সামনের দুটি বাড়ি কিনে নেওয়া হলো কলেজের জন্যে। ১৯৬৪ সালে ১৬ ই আগষ্ট ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের বাংলার অধ্যপক বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক প্রয়াত মিন্নাত আলীকে অধ্যক্ষ নিয়োগ করে ১৯৬৪-৬৫ শিক্ষাবর্ষ হতে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা হয়। অর্গানাইজিং কমিটির পরামর্শক্রমে স্থানীয় মডেল গার্লস হাইস্কুলে মর্নিং শিফটের মাধ্যমে পাঁচজন খণ্ডকালীন শিক্ষক দ্বারা বিশজন ছাত্রী নিয়ে ক্লাস শুরু হয়। এভাবেই যাত্রা শুরু হয় মহাবিদ্যালয়টির। পরবর্তীতে বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে সুনামখ্যাত হয়ে ওঠে অল্প দিনের মধ্যেই।
আরো পড়ুন: সমুদ্রবিজ্ঞান (ওশানোগ্রাফি) – সাবজেক্ট রিভিউ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে কেন পড়ব?
শুরু থেকেই মহিলা কলেজটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মানুষের কাছে অনেক আকাঙ্ক্ষিত। কেননা সেইসময় ছেলে-মেয়ে একসাথে পড়তে হবে বলে স্কুল পাশের পর প্রায় মেয়েকেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো। সেখানে মহিলা কলেজ স্থাপিত হওয়া মানে স্বপ্নপূরণের এক প্রধান ধাপ উন্মোচিত হওয়া। বিভিন্ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে মেয়েদের সেখানে প্রস্তুত করা হয় ভবিষ্যতের যোগ্য কর্ণধার হিসাবে। তাছাড়াও নিরাপদ পাঠদানের পাশাপাশি মনোরম পরিবেশে ছাত্রীদের গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞায় পরিবদ্ধ কলেজটি। এই কলেজের অনেক শিক্ষার্থী আজ বড় বড় জায়গা,পদে পর্দাপণ করছেন যা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে অনুপ্রেরণা হিসাবে সাহস জোগায়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগসমূহ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে উচ্চমাধ্যমিকের তিনটি বিভাগ-ই বিদ্যমান।
উচ্চমাধ্যমিকের বিভাগগুলো হল:
- বিজ্ঞান বিভাগ
- ব্যবসায় বিভাগ
- মানবিক বিভাগ
তাছাড়াও অনার্স ও ডিগ্রিতে পড়ারও ভালো সুযোগ রয়েছে।
অনার্সের বিভাগগুলো হল:
- বাংলা বিভাগ
- দর্শন বিভাগ
- রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
ডিগ্রি প্রোগ্রামগুলো হল:
- কলা স্নাতক (BA)
- সমাজবিজ্ঞান (BSS)
আরো পড়ুন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় রিভিউ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের ল্যাব সুবিধা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে ভালো মানের গবেষণাগার রয়েছে। প্রয়োজনীয় গবেষনা যন্ত্র ও প্রযুক্তির মাধ্যমে এখানে শিক্ষাদান করা হয়। বিভিন্ন বিভাগের উপর আলাদা আলাদা ল্যাব আছে। ল্যাবগুলো হল:
- পদার্থবিজ্ঞান ল্যাব
- রসায়ন ল্যাব
- জীববিজ্ঞান ল্যাব
- তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ল্যাব ইত্যাদি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের আবাসিক হল
ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহিলা সরকারি কলেজে ২ টি আবাসিক হল রয়েছে। প্রতিটি হলে রয়েছে আলাদা রিডিং ব্যবস্থা, ডাইনিং রুম, ইনডোর খেলার ব্যবস্থা, বড় খেলার মাঠ।
হলসমূহ:
- আসমা ভবন
- জিয়া ভবন
হলগুলোর হল সুপার, হল ম্যানাজার ও কর্মচারীদের ব্যবহার অত্যন্ত ভালো। তাছাড়া খাবারও স্বাস্থ্যসম্মত।
আরো পড়ুন: নটর ডেম কলেজ রিভিউ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অন্যান্য সুবিধা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজর শিক্ষার্থী-শিক্ষক সম্পর্ক
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে অনেক ভালো সম্পর্ক থাকে।শিক্ষক-শিক্ষিকা মহোদয়েরা যেমন পিতৃ সুলভ/মাতৃ সূলভ আচরণ করেন বন্ধুসুলভ আচরণও করে থাকেন।সব সমস্যা ও প্রয়োজনে যথাসাধ্য সাহায্য করার চেষ্টা করেন। আর মহাবিদ্যালয়টি অধ্যক্ষ মহোদয়ও অনেক অমায়িক মানুষ। কলেজটির বড় আপুরাও অনেক বন্ধুসুলভ।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের গ্রন্থাগার
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের অভ্যন্তরে একটি নিজস্ব পাঠাগার রয়েছে। সেটি বিজ্ঞান ভবনের নিচতলায় অবস্থিত।পাঠাগারটিতে কয়েক হাজারের বেশি বই রয়েছে। পাশাপাশি দৈনিক সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ও অন্যান্য জার্নাল রয়েছে। দুইজন লাইব্রেরিয়ান রয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের মিলনায়তন
কলেজের একটি বিশাল আকারের মিলনায়তন রয়েছে। এটি মানবিক বিভাগের ভবনের নিচতলায় অবস্থিত।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের খেলাধুলা ও বিনোদন
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে খেলাধুলা করার জন্য একটি বড় মাঠ আছে।সেখানে ক্রিকেট খেলার জন্য আলাদা করে মাঠ করা আছে।বিনোদনের জন্য অনেক সাংস্কৃতিক সংঘও আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন
কলেজটিতে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
- রোভার স্কাউট
- বিএনসিসি
কলেজের মেয়েরা সেগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগদান করেন এবং পড়াশোনার পাশাপাশি সামাজিক কাজে নিয়োজিত থাকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার মান
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ অনেক উচ্চশিক্ষিত। সকলেই বিসিএস ক্যাডার।ওনাদের মধ্যে অনেকেই পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। শিক্ষক-শিক্ষিকাবৃন্দ তাদের অর্জন, মেধা,মনন সব কিছু মিলিয়ে ছাত্রীদের ভালো কিছু দেওয়ার চেষ্টায় থাকেন। আর, কলেজটি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সব কলেজের মধ্যে ২য় স্থান দখল করে আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি
মহিলা কলেজের ক্যাম্পাস লাইফ
অধিকাংশ শিক্ষার্থীর ভাষ্যমতে কলেজের ক্যাম্পাস লাইফ নাকি অনেক বোরিং হয়ে থাকে। কিন্তু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের ক্যাম্পাস খুবই আনন্দময়।এই পর্যন্ত যারা পড়ে যারা পড়ে গেছেন এই মহাবিদ্যালয়টিতে সবার এই এক কথা। এখানকার ক্যাম্পাস লাইফ এককথায় অসাধারণ। পড়াশোনা, খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদি উপভোগ করার মাধ্যমেই ছাত্রীরা আনন্দের সাথে কাটায় তাদের ক্যাম্পাস লাইফ। বড় বোনদের ও সহপাঠীদের সহচার্যে সুন্দরতম দিনগুলো উপভোগ করে এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের ক্যাম্পাসে।
সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মধ্যে যেন এক অন্যভুবনের মধ্যে পড়াশোনা হয় এখানে। বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলোর অনুষ্ঠানের পাশাপাশি পহেলা বৈশাখ, বসন্ত উউসব ছাড়াও সব ধরনের অনুষ্ঠান এখানে ঝাঁকজমকভাবে উদযাপিত হয়। তাছাড়া বিভিন্ন শিক্ষাসফর, বার্ষিক ভ্রমণ, আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতাসহ অনেক খেলার আয়োজন করে থাকে কলেজ কতৃপক্ষ।
বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা, সংবাদ, ফ্যাক্ট চেকিং ও সাহিত্য পড়তে ভিজিট করুন: শিক্ষা ওয়েব বিজ্ঞান ক্লাব
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে একটি শহীদ মিনার রয়েছে। এখানে সব জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানগুলোর পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজের ভর্তি পদ্ধতি ও প্রস্তুতি
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজে ভর্তি হতে কোনো ভর্তি পরিক্ষা হয় না। তবে,পূর্বের শ্রেনির পাশ করা জিপিএ এর মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে ভর্তি করা হয়। সেক্ষেত্রে অনলাইনে ফর্মপূরণ করে ভর্তি আবেদন করতে হয়। তারপর উক্ত কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলে কলেজে এসে সরকার নির্ধারিত ফি এর মাধ্যমে ভর্তি হতে হয়।
শেষকথা
নিঃসন্দেহে সেরা, ভালো,উন্নত ও মননশীল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হচ্ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ।তাই এই কলেজে পড়তে হলে অবশ্যই ভালো ফলাফল করতে হবে এসএসসি/এইচএসসিতে। সব মিলিয়ে ভালোলাগার ও ভালোবাসার একটা প্ল্যাটফর্ম এটি। অনাগতদের জন্য শুভকামনা। সবার চেষ্টা সফল হোক।
শেখ তানিয়া
কলেজ প্রতিনিধি, শিক্ষা ওয়েব
উচ্চমাধ্যমিক (ব্যাচ ২০২০-২১)
বিজ্ঞান বিভাগ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া