37 C
Dhaka
Thursday, April 25, 2024
Homeসাবজেক্ট রিভিউসমুদ্রবিজ্ঞান (ওশানোগ্রাফি) - সাবজেক্ট রিভিউ

সমুদ্রবিজ্ঞান (ওশানোগ্রাফি) – সাবজেক্ট রিভিউ

Oceanography Subject Review

সমুদ্রবিজ্ঞান নাম থেকেই কিন্তু আন্দাজ করা যায় বিষয়টা কেমন হতে পারে। আন্ডারগ্র্যাজুয়েশনে ডিগ্রির সাথে সাথে যারা অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে চাও তাদের জন্য পছন্দের বিষয় হতে পারে সমুদ্রবিজ্ঞান বা ওশানোগ্রাফি (Oceanography)। আপাত দৃষ্টিতে নতুন এই বিষয়টিতে রয়েছে অপার সুযোগ ও সম্ভাবনা। সমুদ্র নিয়ে সুন্দর করে বলা যায়,

The beauty and mystery of the ocean, fills our lives with wonders, vast beyond our imagination.” – M. L. Borges

সমুদ্রবিজ্ঞান কি?

সমুদ্রবিজ্ঞান নাম থেকেই বোঝা যায় এটার বিষয়বস্তু। মূলত সমুদ্র নিয়ে পড়াশোনাই হল সমুদ্রবিজ্ঞানের মূল উদ্দেশ্য। পৃথিবীর প্রায় ৭১% হল জল আর ২৯% হল স্থল। জলের মধ্যে ৯৬.৫%-ই হল সমুদ্রের জল। তাহলে বোঝা যাচ্ছে, পৃথিবীর একটা বড় অংশই সমুদ্র। আয়তনের ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী আন্তজার্তিক বাণিজ্যের ৮০ শতাংশ এবং মূল্যের ভিত্তিতে প্রায় ৭০ শতাংশের বেশি সম্পদ সমুদ্রপথে বহন করা হয়। এর বাইরে সমুদ্রে আছে বিপুল প্রজাতির প্রাণ। এতকিছুর জন্য সমুদ্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তাই সেটি নিয়ে প্রয়োজন বিস্তর পড়াশোনা। তার জন্যই পড়ানো হয় সমুদ্রবিজ্ঞান।

আরো পড়ুন: শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন (পিস অ্যান্ড কনফ্লিক্ট স্টাডিজ) – সাবজেক্ট রিভিউ

সমুদ্রবিজ্ঞানে কি কি পড়ানো হয়?

সমুদ্রবিজ্ঞানে পড়ালেখার মূল উদ্দেশ্য সমুদ্র সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন, ভু-ভাগ ও সাগরের আন্তসম্পর্ক, সমুদ্রসম্পদ আহরনের উপায় ও সুষ্ঠু ব্যাবহার সম্পর্কে জানা। এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কোর্সপ্লান সাজিয়ে থাকে। অ্যাকাডেমিক পড়াশুনার পাশাপাশি ল্যাবরেটরিতে কাজ এবং ফিল্ড ট্রিপ, ফিল্ড ওয়ার্ক এখানে বাধ্যতামূলক। তাই পড়ার মাঝে ঘুরোঘুরির জন্যও সমুদ্রবিজ্ঞান বেছে নিতে পারো।

কেন সমুদ্রবিজ্ঞান পড়ব?

প্রথমেই আসে সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রয়োজনীয়তা কেন। বাংলাদেশের দক্ষিণ সীমান্ত জুড়ে আছে বঙ্গোপসাগর, পৃথিবীর সবথেকে বড় সমুদ্রসৈকত, বঙ্গোপসাগর খনিজ ও প্রাণিজ সম্পদের দিক দিয়ে বেশ সম্পদশালী। কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক সম্পদ আহরন, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের জন্য দরকার প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী, গবেষক ও দক্ষ জনবল। ২০১২ এবং ২০১৪ সালে মিয়ানমার ও ভারতের সাথে সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর বিষয়টির প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায় বহুগুণে। ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির ধারণাটি এখন বেশ জনপ্রিয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদার সাথে পাল্লা দিতে বেশিরভাগ দেশ এখন ঝুঁকছে সমুদ্রসম্পদের দিকে। তাই সমুদ্রবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের ভূমিকা দিন দিন আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

সমুদ্রবিজ্ঞানের কর্মক্ষেত্র

সমুদ্রবিজ্ঞানে গ্রাজুয়েশন এর পর সরকারি চাকুরির ক্ষেত্র রয়েছে বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট (BORI) কক্সবাজারে সায়েন্টিফিক অফিসার হওয়ার সুযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা, বিসিএস দেয়ার সুযোগ। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়াও সম্ভব, অনেক দেশেই সমুদ্রবিজ্ঞানের জন্য রয়েছে স্কলারশিপ এর ব্যবস্থা।

কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞানে পড়ানো হয়?

বাংলাদেশে সমুদ্রবিজ্ঞান পড়ানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। সমুদ্র গবেষণার প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের একমাত্র এবং দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় মেরিটাইম বিষয়ে বিশেষায়িত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়‘। যেখানে সমুদ্রবিজ্ঞানের সাথে, সামুদ্রিক মাৎস্যবিজ্ঞান (মেরিন ফিশারিজ), নেভাল আর্কিটেকচার ও অফশোর ইঞ্জিনিয়ারিং রয়েছে।

বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা, সংবাদ, ফ্যাক্ট চেক ও অন্যান্য লেখা পড়তে ভিজিট করুন: শিক্ষা ওয়েব বিজ্ঞান ক্লাব

শেষকথা

সব শেষে, সমুদ্রকে ভালোবেসে তার সাথে যদি বিজ্ঞানকেও ভালোবাসতে পারো, স্নাতক শেষে বলার মত একটা গল্প নিয়েই বের হতে পারবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

সারাবুন তহুরা ও ওমর সজিব
বিএসসি ইন ওশানোগ্রাফি
সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

RELATED ARTICLES

সাম্প্রতিক লেখা

লেখার আর্কাইভ

জনপ্রিয় ক্যাটাগরি

সাম্প্রতিক কমেন্ট