‘নটর ডেম কলেজ, ঢাকা (Notre Dame College, Dhaka)‘ হল দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় কলেজ। একে সংক্ষেপে NDC বলে ডাকা হয়। এটি একটি বেসরকারি কলেজ। শুধুমাত্র ছেলেরাই এখানে ভর্তি হতে পারে। ছাত্রদের আদর্শ শিক্ষাদান ও চরিত্র গঠনের কাজে নিবেদিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নটর ডেম কলেজে ভর্তির পর পুরো কলেজ জীবন ধরে যত্ন সহকারে ছাত্রদের প্রশিক্ষণ, মূল্যবোধ, নৈতিকতার গঠন দেওয়া হয় তাই কলেজের সকল নিয়ম-শৃঙ্খলা পালনে ছাত্রদের যত্নবান হতে হবে।
বিষয়সূচি
বিষয়সূচি
- নটর ডেম কলেজের অবস্থান ও পরিচিতি
- নটর ডেম কলেজে কেন পড়ব?
- নটর ডেম কলেজের অবকাঠামো
- নটর ডেম কলেজের বিভাগ ও আনুষঙ্গিক
- নটর ডেম কলেজের ল্যাব সুবিধা
- নটর ডেম কলেজের অন্যান্য সুবিধা
- নটর ডেম কলেজের দর্শন
- নটর ডেম কলেজের কর্মপ্রচেষ্টা
- নটর ডেম কলেজের ক্যাম্পাস লাইফ
- নটর ডেম কলেজের ক্লাবসমূহ
- নটর ডেম কলেজের স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য
- নটর ডেম কলেজের ভর্তি পদ্ধতি ও প্রস্তুতি
- নটর ডেম কলেজের অন্যান্য বিষয়
- শেষ কথা
নটর ডেম কলেজের অবস্থান ও পরিচিতি
রাজধানী ঢাকা শহরের টয়েন বী সার্কুলার রোড তথা মতিঝিল-আরামবাগ-শাপলাচত্বর এলাকায় স্থাপিত নটর ডেম কলেজ প্রথমে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে পুরনো ঢাকার লক্ষ্মীবাজার এলাকায় ‘সেন্ট গ্রেগরী কলেজ‘ নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৫৪-৫৫ শিক্ষাবর্ষে তা বর্তমান এই নিজস্ব ভবনে স্থানান্তরিত হয় এবং কলেজের নাম পরিবর্তন করে ‘নটর ডেম কলেজ, ঢাকা‘ রাখা হয়।
রোমান কাথলিকদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলেও এই কলেজে সকল ধর্মাবলম্বী ছাত্ররা অধ্যয়ন করতে পারে। যা পরিচালিত হয় হলিক্রস সন্ন্যাস সংঘের ফাদারদের দ্বারা। এই সন্ন্যাস-সংঘের তিনটি শাখা আছে-ফাদার, ব্রাদার ও সিস্টার। তারা সকলেই ঈশ্বর ও মানুষের সেবা,যুব সমাজের গঠন ও শিক্ষাদান কাজে জীবন উৎসর্গ করেন। হলিক্রস সংঘের ফাদারগণ উত্তর আমেরিকাতে নটর ডেম বিশ্ববিদ্যালয়, পার্টল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়, এস মহাবিদ্যালয় ও ডোনহিল মহাবিদ্যালয় পরিচালনা করেন। বর্তমানে নটর ডেম কলেজে শিক্ষাদান ও প্রশাসনিক কাজে কয়েকজন সন্ন্যাসব্রতী ধর্মযাজক ও বেশ কিছু সংখ্যক অভিজ্ঞ শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োজিত আছেন।
নটর ডেম কলেজে কেন পড়ব?
এটি বাংলাদেশের দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি কলেজ। নটরডেম কলেজের এ সাফল্যের কারণ হল:
- অধিকাংশ কলেজের পড়ালেখা আসলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কেন্দ্রিক। কিন্তু নটর ডেম কলেজের পড়ালেখা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাকেন্দ্রিক। তাই এখানে পড়াশোনা করলে একসাথে উচ্চমাধ্যমিক ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষারও প্রস্তুতি হয়ে যায়।
- সকল বেসরকারি কলেজের মধ্যে নটর ডেম কলেজের বেতন তুলনামূলক কম।
- কলেজের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এখানে বিভিন্ন জেলার, বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার, বিভিন্ন পেশার, বিভিন্ন শ্রেণির, বিভিন্ন ধর্মের, বিভিন্ন নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মানুষের সাথে পরিচিত হওয়া যায়।অর্থাৎ দেশব্যাপী বন্ধুত্বের নেটওয়ার্ক তৈরি হয়ে যায়। নিজ গ্রুপের ১৩০জন তো আছেই,পুরো ব্যাচে তিনহাজারের বেশি শিক্ষার্থী এবং অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সব বড় ভাইদের সাহায্য দেশ তথা বিশ্বজুড়ে পাওয়া যায়।
- এখানে ব্যবহারিক ক্লাসের উপরে বেশ জোর দেওয়া হয়। এটার জন্যও আসলে কলেজের অবদান অনেক। ক্লাবের কথাগুলো অন্তর্ভুক্ত করলাম না। সেগুলো কলেজে অধ্যয়ন করলেই সব জেনে যাবে।
আরও অনেক কারণ আছে; বলা শুরু করলে শেষ হবে না। কলেজের ছাত্র হিসেবে এই আশ্বাসটুকু দিতে পারি যে, কলেজে ভর্তি হয়ে যা যা অভিজ্ঞতা, শৃঙ্খলাবোধ, নৈতিকতা ইত্যাদি অর্জন করতে পারবে তা শুধুমাত্র নটর ডেম কলেজে অধ্যয়ন করলেই পাওয়া সম্ভব; অন্যথায় নয়।
আরো পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রিভিউ
নটর ডেম কলেজের অবকাঠামো
- ৪টি অ্যাকাডেমিক ভবন
- ফাদার হ্যারিংটন ভবন
- ফাদার টীম ভবন
- ফাদার পিশোতো ভবন
- ফাদার গাঙ্গুলী ভবন
- ১টি বড় খেলার মাঠ
- ১টি বাস্কেটবল গ্রাউন্ড
- ১টি সুবিশাল পাঠাগার
- স্বাস্থ্যসম্মত ক্যান্টিন
- নামাজ ঘর
- সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমের জন্য ২৩ টি ক্লাব ও ক্লাব রুম
- লিটারেসি স্কুল
- মনোমুগ্ধকর সবুজায়ন ক্যাম্পাস
- মাছ পালনের জন্য কৃত্রিম অ্যাকুরিয়াম
- গরীব খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীদের আবাসনের জন্য ৩ তলা বিশিষ্ট মার্টিন হল।
- মুক্তমঞ্চ
- সুবিশাল অডিটোরিয়াম
নটর ডেম কলেজের বিভাগ ও আনুষঙ্গিক
নটর ডেম কলেজে বিজ্ঞান বিভাগ, ব্যবসায় শিক্ষা, মানবিক বিভাগ- এই তিন বিভাগ রয়েছে। বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চতর গণিত (Higher Mathematics), পদার্থ বিজ্ঞান (Physics), রসায়ন (Chemistry), জীববিজ্ঞান (Biology) বিষয়গুলো পড়ানো হয়৷ ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের বিষয়গুলো হল হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, অর্থসংস্থান, পরিসংখ্যান। মানবিক বিভাগে দর্শন, অর্থনীতি, ভূগোল, ইতিহাস, সমাজবিজ্ঞান, পৌরনীতি বিষয়গুলো পড়ানো হয়। কলেজে বর্তমানে মোট ২৫টি গ্রুপ (Group) রয়েছে। এর মধ্যে 16টি বিজ্ঞান শাখার (গ্রুপ ১ থেকে ১৪ পর্যন্ত বাংলা মাধ্যম; গ্রুপ ১৫-১৬ ইংরেজি মাধ্যম), ৭টি ব্যবসায় শিক্ষা (গ্রুপ A-F) ৩টি মানবিক বিভাগের (গ্রুপ G, H ও W) গ্রুপ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে শুধু বিজ্ঞান বিভাগে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম চালু আছে।
আরো পড়ুন: প্রোগ্রামিংয়ের আদ্যোপান্ত
প্রতি সপ্তাহে রবিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮:০০ ঘটিকা হতে ১২:৪০ ঘটিকা পর্যন্ত প্রথম বর্ষ এবং দুপুর ১:০০ ঘটিকা হতে বিকেল ৫:৪৫ ঘটিকা পর্যন্ত দ্বিতীয় বর্ষের শ্রেণি কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
প্রথম বর্ষের শ্রেণী কার্যক্রম শেষে ল্যাব কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়। তেমনি ভাবে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের মর্নিং সেশনে ব্যবহারিক ক্লাস হয়। বুধবার চতুর্থ ঘণ্টার পর মূল্যবোধের পাঠ অনুষ্ঠিত হয় । প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি থাকে।তবে কলেজের ক্লাব কর্মসূচির বেশিরভাগই শুক্রবার ও শনিবার হওয়ায় কলেজ খোলা থাকে। কলেজে ব্যবহারিক শিক্ষা কর্মসূচিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রদের পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত, মানবিক বিভাগে ভূগোল এবং সকল বিভাগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে ব্যবহারিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা আবশ্যক।
নটর ডেম কলেজের ল্যাব সুবিধা
আর্চবিশপ গাঙ্গুলী ভবনের ৩য় তলায় জীববিজ্ঞান, ফাদার হেরিংটন ভবনের নিচতলায় পদার্থবিজ্ঞান, ২য় তলায় রসায়ন এবং ফাদার টিম ভবনের ৩য় তলায় আইসিটি ল্যাব অবস্থিত। কলেজে ভর্তির কিছুদিনের মধ্যেই ছাত্ররা ল্যাবকার্ড পেয়ে যায়।
ল্যাবের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রত্যেক বিভাগেই কয়েকজন করে প্রদর্শক, সহকারী প্রদর্শক রয়েছেন। কলেজের ল্যাব এতই সমাদৃত যে ভবিষ্যতে কোনো ছাত্র যখন বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ল্যাব সুবিধা পায়, তখন ওখানকার প্রদর্শকগণ নটরডেম কলেজের ছাত্রদের অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।
আরো পড়ুন: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রিভিউ
নটর ডেম কলেজের অন্যান্য সুবিধা
প্রকাশনা
নটর ডেম কলেজের প্রধান প্রকাশনা ‘ব্লু অ্যান্ড গোল্ড’ হলো কলেজের ছাত্রদের উদ্যমের ফসল। প্রতি বছর প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে ব্লু অ্যান্ড গোল্ড প্রকাশিত হয়। এছাড়াও প্রতি ৩ মাস পরপর ‘ঢাক-ঢোল/Chit-Chat’ নামে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা বের হয়, যেগুলো বিনামূল্যে শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়ে থাকে। বাৎসরিক ও ত্রৈমাসিক উভয় প্রকাশনায় শিক্ষার্থীদের লেখা কবিতা, গল্প, গবেষণা, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী (সায়েন্স ফিকশন) ও অন্যান্য লেখা আদৃত হয়।
অন্যান্য প্রকাশনার মধ্যে দ্বৈরথ, পরিবেশ (Nature), Newsletter, কসমস, সপ্তডিঙ্গা, অ্যাডভেঞ্চার, স্পুটনিক (বাংলা ও ইংরেজি), বিপণন, আবিষ্কার, বিজনেস হরাইজন, প্রব্রজ্যা, যুধিষ্টির, গবেষণা, প্রদাহ, ধানের শীর্ষে আগুন, প্রকৃতি, সেবাব্রতী, বৃন্দ, বিকিকিনি, মেডিসিন, দুর্দান্ত, যোগাযোগ, অনির্বাণ, বন্ধন, ‘Curser’ স্বাস্থ্যবার্তা, নৈবেদ্য, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
গ্রন্থাগার
আর্চবিশপ গাঙ্গুলী ভবনের চতুর্থ তলায় গ্রন্থাগারটি অবস্থিত। কলেজে ভর্তির সাথে সাথে ছাত্ররা গ্রন্থাগারের সদস্য হয় এবং লাইব্রেরি কার্ড পেয়ে যায়। গ্রন্থাগারে নিয়মিত ৬টি দৈনিক পত্রিকা, টি সাপ্তাহিক ও ৪টি মাসিক ম্যাগাজিন রাখা হয়। এছাড়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ সাময়িকী ও প্রবন্ধপ্রন্থ অনিয়মিতভাবে রাখা হয়। বইসমূহ লাইব্রেরি কার্ডের প্রেক্ষিতে ধার নেয়া যায়। তবে অভিধান, বিশ্বকোষ, পাঠ্যবই ইত্যাদি দুষ্প্রাপ্য বইসমূহ কেবল গ্রন্থাগারেই ব্যবহার্য। গ্রন্থাগার এ নিরবতা পালনের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
বিজ্ঞান বিষয়ক লেখা পড়তে ভিজিট করুন: শিক্ষা ওয়েব বিজ্ঞান ক্লাব
নটর ডেম কলেজের দর্শন
নটর ডেম কলেজ-এর শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে গোটা ব্যক্তির সামগ্রিক বিকাশ-ছাত্রদের আত্মনিবেদিত, সৃজনশীল, সেবাব্রতী, বিদ্যা ও জ্ঞান অর্জনে ও তা প্রয়োগে নিবিষ্ট ও দক্ষ, এবং যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দায়িত্বশীল করে গড়ে তোলা।
মর্মবাণী
নটর ডেম কলেজ-এর ছাত্র : ‘নিবেদিত,সৃজনশীল, দক্ষ ও দায়িত্বশীল’।
নটর ডেম কলেজের কর্মপ্রচেষ্টা
পবিত্র ক্রুশ সংঘের যাজকগণ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত নটর ডেম কলেজ-এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে ছাত্রদের নৈতিক মূল্যবোধ, সহনশীলতা, ন্যায়নিষ্ঠতা, সহমর্মিতা, দায়িত্ববোধ এবং সমাজ, দেশ ও বিশ্বের প্রতি গভীর ও অকৃত্রিম ভালবাসায় গড়ে তোলা। নটের ডেম কলেজ ছাত্রদের মেধা, মন হৃদয়ের উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে পূর্ণ বিকশিত মানবিক গুণাবলীসমৃদ্ধ মানুষরূপে গড়ে তুলতে সচেষ্ট।
মর্মবাণী
নটরডেম কলেজ : ‘মেধা, মন ও হৃদয় বিকাশে নিবেদিত’।
নটর ডেম কলেজের ক্যাম্পাস লাইফ
আমার কাছে আমার ক্যাম্পাস লাইফটা ছিল একদম অন্যরকম। কারণ আমি প্রথমত ছিলাম একজন নটরডেমিয়ান এবং পাশাপাশি আমি ছিলাম একজন মিশনিয়ান। তো স্বাভাবিকভাবেই আমার লাইফ স্টাইল টা একটু অন্যদের থেকে আলাদা। রামকৃষ্ণ মিশনে আমরা ৪০ জন ছিলাম। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই আমাদের প্রার্থনা হতো। তারপর সকালের খাবার, এরপর স্নান সেরে কলেজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হতাম। প্রথমবর্ষে আমাদের সকাল আটটায় ক্লাস শুরু।
প্রতিদিন ৫টা করে পিরিয়ড ক্লাস হয়। তিনটি ক্লাসের পর মাঝখানে ১৫ মিনিটের বিরতি থাকে। ১২:৪০ এ ক্লাস শেষ তা রপর মিশনে এসে খাওয়া করে একটু বিরতি। যদি ল্যাব ক্লাস থাকে তাহলে আবার কলেজে এসে ল্যাব কার্যক্রম সম্পন্ন করে মিশনে ফিরে যাই। সন্ধ্যায় সন্ধ্যা আরাত্রিক শেষে পড়তে বসি। রাত ৯টায় খাওয়া করে আবার পড়তে বসি। ঘুমের জন্যে ৬-৮ ঘণ্টা সময় রাখতাম। এটা গেল আমার মিশন লাইফ+নটরডেম লাইফ।
এখন বলি যারা কলেজের পাশে ডালাজগলিতে হোস্টেলে থাকে তাদের কথা। তাদের লাইফস্টাইলটা একটু অন্যরকম। হোস্টেল লাইফে ঘুম ঘুম চোখে কলেজে এসে আটটায় ক্লাস করে স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য কাজগুলো হয়। মজার ব্যাপার হলো হোস্টেল লাইফে নিজের ইচ্ছে মত থাকা যায়। তাই এখানে নিজেকেই নিজে কন্ট্রোল করতে হয়। তাই সময়ের সদ্ব্যবহার করা উচিত।
আর কলেজ ক্যান্টিনের উপচে পড়া ভিড় ঠেলে শিঙ্গাড়া খাওয়া-এক অনন্য কাহিনী। সাপ্তাহিক দুটো করে কুইজ হয়। বাইরের মানুষজন কুইজ টেস্টকে অন্যান্য কুইজের মতোই ভাবে, কিন্তু নটরডেম কলেজের কুইজ-তার বিশেষত্বই আলাদা।
নটর ডেম কলেজের ক্লাবসমূহ
কলেজগুলোর মধ্যে দেশের সবচেয়ে বেশি ক্লাব ও সংগঠন শুধুমাত্র নটর ডেম কলেজেই আছে। নটর ডেম কলেজের ক্লাব ও সংগঠনগুলো হল:
- নটর ডেম ডিবেটিং ক্লাব
- নটর ডেম বিজ্ঞান ক্লাব
- নটর ডেম অ্যাডভেঞ্চার ক্লাব
- নটর ডেম রোভার গ্রুপ
- নটর ডেম বিজনেস ক্লাব
- নটর ডেম চেস ক্লাব
- নটর ডেম মানবিক সংঘ
- নটর ডেম ন্যাচার স্টাডি ক্লাব
- নটর ডেম ডিগ্রি ক্লাব
- যুব রেড ক্রিসেন্ট, নটর ডেম কলেজ
- রোটার্যাক্ট ক্লাব অব নটর ডেম কলেজ
- নটর ডেম নাট্যদল
- নটর ডেম আবৃত্তি দল
- নটর ডেম ইকো অ্যান্ড স্পেস ক্লাব
- ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং অ্যান্ড রিলেশনশিপ ক্লাব
- নটর ডেম সাংস্কৃতিক ক্লাব
- নটর ডেম লেখককুঞ্জ
- নটর ডেম ইংলিশ ক্লাব
- নটর ডেম আর্ট ক্লাব
- নটর ডেম ম্যাথ ক্লাব
- নটর ডেম এথিকস ক্লাব
- নটর ডেম ফটোগ্রাফি ক্লাব
- নটর ডেম আইটি ক্লাব
প্রত্যেক ক্লাবের দুজন করে মডারেটর রয়েছেন। রয়েছে ক্লাবগুলোর নিজস্ব কর্মসূচি।
আরো পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ রিভিউ
নটর ডেম কলেজের স্মৃতিস্তম্ভ ও ভাস্কর্য
মাতামেরী
নটর ডেম কলেজের সবচেয়ে প্রতীকী স্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয় মূল প্রবেশদ্বার থেকে কিছুটা সামনে মেরির কোলাজচিত্র “জ্ঞানের আসন” ও তৎসংলগ্ন এলাকা, যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে মাতা মেরী নামেই জনপ্রিয়। ৬ ফুট × ৮ ফুটের এ কোলাজচিত্রটি “হ্যারিংটন ভবনের” পূর্বদিকে মুক্তভাবে স্থাপিত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। প্রতিষ্ঠানটি যিশুর মা মেরির স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত বলে দীর্ঘসময় ধরে পরিকল্পনা করে কলেজটির একটি প্রতীক হিসেবে এটি তৈরি করা হয়েছে।
কোলাজচিত্রটিতে মেরি শিশু যিশুকে বর্ণমালা শিক্ষা দিচ্ছেন আর পাশ থেকে উজ্জ্বল “দীপ্তি” পুরো পরিবেশকে আলোকিত করে রেখেছে, যা খ্রিষ্ট ধর্মমতানুযায়ী যিশুর পৃথিবীর আলোক উৎস হবার ধারণাকে প্রতীকায়িত করে। এতে মেরিকে সাধারণ বাঙালি শাড়ি ও যিশুকে পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে থাকতে দেখা যায়, যা তাদের শিক্ষার সার্বজনীনতাকে প্রতিনিধিত্ব করে।
কোলাজচিত্রটির শিল্পী হলেন – মির্জা রবিউল আলম খোকন। নটর ডেম কলেজের এ কোলাজচিত্রটির পেছনে তিনি তার দলসহ টানা একমাস সময় ব্যয় করেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পাশাপাশি কিছু টালি বাংলাদেশে না পাওয়ায় শ্রীলঙ্কা থেকে এনেছিলেন। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ অক্টোবর কাজ শেষে এটি স্ব-স্থানে বসানো হয়।
নটর ডেম কলেজের ভর্তি পদ্ধতি ও প্রস্তুতি
শুরু থেকেই নটর ডেম কলেজে নিজস্ব মূল্যায়ন পদ্ধতি অনুসরণ করে ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করে থাকে।তাই সচরাচর ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমেই নতুন শিক্ষার্থীদের ভর্তি নেয়া হয়। এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ এর এক সপ্তাহ থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে কলেজ ওয়েবসাইটে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় যেখানে ভর্তি সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য বিস্তারিত আকারে বর্ণিত থাকে।
২০২০ সালে কোভিড-১৯ এর জন্যে অনলাইন ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। যেহেতু ধরাবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হয়,তাই অনলাইনে ভর্তির জন্য যেসকল বিরম্বনার স্বীকার অভিভাবকগণ হতে পারে বা হয়,সেসকল সব বিষয়ের উপর ডেমো পরীক্ষা, ডেমো প্রসেসিং ভিডিও সব কিছু বুঝিয়ে তারপর পরীক্ষাটি নেয়া হয়েছে। এবার অর্থাৎ ২০২২ এ ভর্তি কার্যক্রম অফলাইন এ তথা চিরায়ত নিয়মেই হবে, সেটাই আশা করি।
ভর্তি প্রস্তুতির জন্য অনেক গুলো কোচিং সেন্টার প্রস্তুতি ব্যাচ চালু করে থাকে। সত্যি কথা বলতে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ ভর্তি পরীক্ষার জন্য ভর্তি প্রস্তুতি যেকোনো কোচিং সেন্টার থেকে নিতে নিরুৎসাহিত করে থাকেন। কারণ একজন শিক্ষার্থী এসএসসি তে ঠিকঠাক ভাবে পড়াশোনা করে থাকলে, সেটার বেসিক/মৌলিক জ্ঞান দিয়েই ভর্তি পরীক্ষায় কৃতকার্য হতে পারে।তাই এর জন্য কোনো কোচিং সেন্টার এ ভর্তি হয়ে প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজনীয়তা নেই।
নটর ডেম কলেজের অন্যান্য বিষয়
কলেজের রোল নম্বরটা একদম ইউনিক। যার রোল নাম্বার সেই কেবল এটার উত্তরসূরী। আমার রোল নম্বর ছিল #১২১১২০৯৩। এখানে,
- ১ হল, বিজ্ঞান বিভাগের প্রতীক
- ২১ হল, এইচএসসি ২০২১ ব্যাচ
- ১২ হল, গ্রুপ ১২ এবং
- ০৯৩ হল, ক্লাস রোল
শেষ কথা
নটর ডেম এক বিশাল পরিবার, চোখের সামনে এক টুকরো বাংলাদেশ। এই পরিবার যেমন কালের পরিক্রমায় আরো বিস্তৃত হচ্ছে, ঠিক তেমনই সমাজ, দেশ তথা বিশ্বকে আলোকিত করে যাচ্ছে সগৌরবে। নটর ডেম কলেজ জন্মলগ্ন থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি ছাত্রদের নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষ হিসেবে, বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। নটর ডেম পরিবার সংশ্লিষ্ট সকলের কাছেই, নটর ডেম হলো অক্সিজেনস্বরূপ, যার আদর্শ, চেতনা ক্রমাগত সজীব করে তোলে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচার শক্তি যোগায়, অনুপ্রেরণা যোগায় আমৃত্যু। এ আঙিনা মানবিক হতে শেখায়, সৎসাহস নিয়ে জীবনযুদ্ধে সততার ঝাণ্ডা উড়াতে শেখায়, মেরুদণ্ড সোজা রেখে লড়াই করা শেখায়। এ আঙিনায় নৈতিকতার বীজ রোপিত হয়।
দশকের পর দশক,নটর ডেম কলেজ যেমন মেধা, মননে, চিন্তাশীলতায় সুন্দর আগামী গঠনে আলোর দিশারী হয়ে পথ দেখিয়ে যাচ্ছে, প্রত্যাশা-ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকুক! অস্তিত্বের সাথে মিশে থাকা প্রাণের কলেজ এগিয়ে যাক, সমুজ্জ্বল থাকুক স্বমহিমায়!
জয়তু নটর ডেম!